Dhaka ০১:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনদস্যু-দালাল মিলে বনে রাজত্ব উচ্ছেদে সর্বশান্ত শতশত পরিবার

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমিতে ব্যাপক অরাজকতার সৃষ্টি হয়। গত ২ মাসে বনদস্যু ও দালাল মিলে বনে রাজত্ব গড়ে তোলে। অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি। অবশেষে বুধবার দিনব্যাপী এক অংশে উচ্ছেদ অভিযানে সর্বশান্ত হয়েছেন ভাড়াটে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার। তবে অন্য এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।

এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। এ সুযোগে পরের দিন বিজয় মিছিল নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াকৈর রেঞ্জ অফিসে হানা দেয় একটি চক্র। তারা লুট করে ওই অফিসের গুলিসহ আগ্নেয় অস্ত্র। এরপর উপজেলার কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা রেঞ্জের বিভিন্ন বিট অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন বনে অরাজকতার সৃষ্টি হয়।

বনদস্যু ও দালালরা মিলেমিলে দেদারছে প্রকাশ্যদিবালোকে বনের গাছ কেটে পাচার ও বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে। গত দুই মাসে ওই দুটি রেঞ্জে প্রায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বনদস্যু ও দালালরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই টাকার ভাগ গেছেন বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পটেকেও। টাকা নিয়ে আবার অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গতে যাওয়ায় একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবশেষে মাইকিং করে উপচেলার বোডমিল পাশাগেট এলাকায় বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে

ঢাকা বনবিভাগ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বন বিভাগের চারটি রেঞ্জের ২৫টি বিটের ৮০ জন বন কর্মকর্তা- কর্মচারী, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে চন্দ্রা বিটের এক অংশ ওই এলাকার প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ছয় একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়।

যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। এদিকে বনের জমিতে গড়ে উঠা এসব বাড়িঘর ভাড়া নিয়ে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানে এসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ায় কক্ষে থাকা বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ উচ্ছেদে দালালরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি সর্বশান্ত হয়েছেন ভাড়াটে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার। শুধু এই এলাকায় নয়, অন্য এলাকাগুলোতেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে বনদস্যুদের অভিযোগ, যেসব অবৈধ স্থাপনা থেকে টাকা নিয়েছে, সেসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়নি বনবিভাগ।

ঢাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষণ রেজাউল আলম জানান, গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় দস্যুরা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। স্থানীয় বন কর্মকর্তারা একাধিক বাধা দিলেও তারা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে গেছে। এমন কি বন বিভাগের কর্মীদের উপরও হামলা চালায়। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় যৌথ বাহিনীকে সাথে নিয়ে এ উচ্ছেদ চালানো হয়েছে। তবে আমাদের এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উচ্ছেদ অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, সম্প্রতি ওই এলাকায় প্রায় ছয় একর বনের জমিতে ২০০ থেকে ২৫০টি অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। কিন্তু মাইকিং করা হলেও তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি। এ কারণে দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে

প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিযানে ছিলেন সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও বনবিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। তবে বনের জমি রক্ষার্থে সব সময় আমাদের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বনদস্যু-দালাল মিলে বনে রাজত্ব উচ্ছেদে সর্বশান্ত শতশত পরিবার

Update Time : ০৫:০৬:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমিতে ব্যাপক অরাজকতার সৃষ্টি হয়। গত ২ মাসে বনদস্যু ও দালাল মিলে বনে রাজত্ব গড়ে তোলে। অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি। অবশেষে বুধবার দিনব্যাপী এক অংশে উচ্ছেদ অভিযানে সর্বশান্ত হয়েছেন ভাড়াটে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার। তবে অন্য এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।

এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। এ সুযোগে পরের দিন বিজয় মিছিল নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াকৈর রেঞ্জ অফিসে হানা দেয় একটি চক্র। তারা লুট করে ওই অফিসের গুলিসহ আগ্নেয় অস্ত্র। এরপর উপজেলার কালিয়াকৈর ও কাচিঘাটা রেঞ্জের বিভিন্ন বিট অফিসের আওতাধীন বিভিন্ন বনে অরাজকতার সৃষ্টি হয়।

বনদস্যু ও দালালরা মিলেমিলে দেদারছে প্রকাশ্যদিবালোকে বনের গাছ কেটে পাচার ও বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে। গত দুই মাসে ওই দুটি রেঞ্জে প্রায় কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বনদস্যু ও দালালরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই টাকার ভাগ গেছেন বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পটেকেও। টাকা নিয়ে আবার অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গতে যাওয়ায় একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবশেষে মাইকিং করে উপচেলার বোডমিল পাশাগেট এলাকায় বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে

ঢাকা বনবিভাগ। অভিযানের নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বন বিভাগের চারটি রেঞ্জের ২৫টি বিটের ৮০ জন বন কর্মকর্তা- কর্মচারী, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে চন্দ্রা বিটের এক অংশ ওই এলাকার প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে প্রায় ছয় একর বনের জমি উদ্ধার করা হয়।

যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। এদিকে বনের জমিতে গড়ে উঠা এসব বাড়িঘর ভাড়া নিয়ে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানে এসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ায় কক্ষে থাকা বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ উচ্ছেদে দালালরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি সর্বশান্ত হয়েছেন ভাড়াটে পোশাক শ্রমিকসহ শতশত পরিবার। শুধু এই এলাকায় নয়, অন্য এলাকাগুলোতেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে বনদস্যুদের অভিযোগ, যেসব অবৈধ স্থাপনা থেকে টাকা নিয়েছে, সেসব অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়নি বনবিভাগ।

ঢাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষণ রেজাউল আলম জানান, গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় দস্যুরা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। স্থানীয় বন কর্মকর্তারা একাধিক বাধা দিলেও তারা বনের জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে গেছে। এমন কি বন বিভাগের কর্মীদের উপরও হামলা চালায়। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় যৌথ বাহিনীকে সাথে নিয়ে এ উচ্ছেদ চালানো হয়েছে। তবে আমাদের এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উচ্ছেদ অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ জানান, সম্প্রতি ওই এলাকায় প্রায় ছয় একর বনের জমিতে ২০০ থেকে ২৫০টি অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। কিন্তু মাইকিং করা হলেও তাদের অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি। এ কারণে দিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে

প্রায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অভিযানে ছিলেন সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও বনবিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। তবে বনের জমি রক্ষার্থে সব সময় আমাদের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।